সুযোগ অবারিত: সরকারি সব ধরনের প্রতিষ্ঠানেই রয়েছে ডাটা এন্ট্রি অপারেটর বা অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদ। এই পদে সাধারণত তুলনামূলক বেশি নিয়োগ দেওয়া হয়। বাংলাদেশ জাতীয় বেতন স্কেলের ১৬তম গ্রেডের অন্তর্ভুক্ত এই পদ মূলত প্রারম্ভিক (এন্ট্রি) পদ হিসেবে ধরা হয়। উচ্চতর শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকলে এই পদ থেকে উচ্চ বেতন স্কেল ও পদোন্নতির যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।
অফিস সহকারী, সাঁট মুদ্রাক্ষরিক কাম অফিস সহকারী, মুদ্রাক্ষরিক, সাঁটলিপিকার বা অফিস সহকারী কাম ডাটা এন্ট্রি অপারেটর অথবা কম্পিউটার অপারেটর সমজাতীয় পদগুলোতে পূর্ণাঙ্গ সরকারি দপ্তরগুলোতে সবচেয়ে বেশি কাজের সুযোগ রয়েছে। বিশেষ করে সচিবালয়, সব ধরনের কোর্ট, রাজস্ব বোর্ডের দপ্তর, অডিট বিভাগ, কাস্টমস দপ্তর, বন্দর, রেলওয়ে, জেলা প্রশাসক, সব ধরনের সামরিক ও বেসামরিক বাহিনী, বিভিন্ন অধিদপ্তরে সবচেয়ে বেশি নিয়োগ দেওয়া হয়। আধাসরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল ও অন্যান্য কলেজ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ নানা ধরনের প্রতিষ্ঠানেও প্রচুর লোকবল নিয়োগ দেওয়া হয়। এ ছাড়া সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বীমা সংস্থা, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতেও এসব পদে জনবল নেওয়া হয়।
যোগ্যতা যা থাকতে হবে: ডাটা এন্ট্রি অপারেটর বা অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর বা সমজাতীয় পদে সরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে চাইলে ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকতে হবে এইচএসসি বা সমমান পাস। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান স্নাতক পাসও চেয়ে থাকে। কম্পিউটার অফিস প্রগ্রামে কাজ জানতে হবে প্রার্থীদের। পদভেদে টাইপিং গতি প্রতি মিনিটে ইংরেজিতে ৩০ এবং বাংলায় ২৫ শব্দ অথবা সাঁটলিপিতে গতি প্রতি মিনিটে ইংরেজিতে ৭০ এবং বাংলায় ৪৫ শব্দ চেয়ে থাকে।
আবার অনেক প্রতিষ্ঠান কম্পিউটার টাইপিং গতি প্রতি মিনিটে ইংরেজিতে ৩০ এবং বাংলায় ২৫ শব্দ অথবা বাংলায় ২০ এবং ইংরেজিতে ২০ শব্দের গতিও চায়।
প্রতিষ্ঠানভেদে ব্যাবহারিকের নম্বর ২০ বা ভিন্নও হতে পারে। নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলো জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নিয়োগবিধি অনুসারে পরীক্ষার যাবতীয় বিষয় নির্ধারণ করে।
বিষয়ভিত্তিক পরীক্ষার প্রস্তুতি: এমআরএ কম্পিউটার অপারেটর মো. শওকত আলী ও মো. ছানোয়ার হোসেন জানান, এমসিকিউ পদ্ধতির লিখিত পরীক্ষায় বাংলা, ইংরেজি, গণিত, সাধারণ জ্ঞান ও কম্পিউটার সম্পর্কিত বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়। মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণির বাংলা, ইংরেজি ও গণিত পাঠ্য বইয়ের কমন কিছু অধ্যায় থেকে প্রশ্নগুলো আসে। গত কয়েক বছরের প্রশ্নপত্র মূল্যায়ন করে দেখা যায়, বাংলায় ১৫ নম্বরের প্রশ্ন করে অনেক প্রতিষ্ঠান। ব্যাকরণে বেশ কিছু কমন ও গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় থেকে প্রশ্ন করা হয়েছে। এককথায় প্রকাশ, বাগধারা, সমাস, কারক, বিভক্তি, অনুবাদ, ভাব-সম্প্রসারণ, পত্রলিখন বা রচনা থাকতে পারে। বাংলায় পদ্যাংশে কবি, কবিতার নাম ও কবিতার অংশ নিয়ে এবং গদ্যাংশে লেখকের পরিচিতি, আলোচিত সংলাপসহ নানা অধ্যায় সমন্বয় করেই প্রশ্নপত্র তৈরি করা হয়। ইংরেজির নম্বর থাকতে পারে ১৫। ইংরেজি বিষয়ে গ্রামারের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের মধ্যে প্রিপজিশন, ভার্ব, ট্রান্সফরমেশন অব সেনটেন্স, কারেকশন, ইডিয়ম অ্যান্ড ফ্রেজ, ন্যারেশন, প্যারাগ্রাফ, ট্রান্সলেশনসহ গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় থেকে প্রশ্ন করা হয়। ১৫ নম্বর থাকতে পারে গণিতে। পাটিগণিত ও বীজগণিত–এই দুই অংশ থেকেই কিছু কমন প্রশ্ন করা হয়। পাটিগণিতে সরল, সুদকষা, ঐকিক, লাভ-ক্ষতি, বীজগণিতে উৎপাদকে বিশ্লেষণ, মান নির্ণয়, সূত্র, পরিমিতি ও জ্যামিতি অংশ থেকেই মূল শর্ট প্রশ্ন করা হয়। সাধারণ জ্ঞান ও কম্পিউটার বিষয়ে ১০ থেকে ২০ নম্বর থাকে। সাম্প্রতিক সময়ের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সাধারণ জ্ঞানের প্রশ্ন করা হয়। সাধারণ জ্ঞান বিষয়ে সমসাময়িক বিষয়, কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স, দৈনন্দিন বিজ্ঞান, বাংলাদেশ প্রসঙ্গ, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিষয়গুলোতে প্রশ্ন থাকতে পারে। কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার ব্যবহারসংক্রান্ত বিষয়ে কিছু প্রশ্ন থাকে। গত বছরগুলোতে এসব পদের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ও বাজারের সহায়ক বইগুলো থেকে প্রার্থীরা পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে পারেন।
প্রশিক্ষণ জরুরি: পাসপোর্ট ও ইমিগ্রেশন অধিদপ্তরের অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর এ কে এম সবুজ জানান, ডাটা এন্ট্রি বা কম্পিউটার অপারেটর পদে যাঁরা কাজ করতে চান, তাঁদের অবশ্যই ন্যূনতম কম্পিউটারের অফিস প্রগ্রাম প্রশিক্ষণের সনদ থাকতে হবে। নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান সাধারণত ন্যূনতম ছয় মাস মেয়াদি সার্টিফিকেট কোর্স প্রশিক্ষণের সনদ চায়। সরকারি যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, টেকনিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটসহ বেসরকারি অনেক প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান কম্পিউটার অফিস প্রগ্রামের ওপর ছয় মাসের সার্টিফিকেট কোর্স এবং এক বছরের ডিপ্লোমা কোর্সের প্রশিক্ষণ দেয়। আগ্রহীরা পছন্দমতো প্রতিষ্ঠান থেকে প্রশিক্ষণ নিতে পারেন।