ব্যাংকে চাকরির পরীক্ষায় গণিতের চেয়ে নম্বর বেশি সাধারণ জ্ঞানে

ব্যাংকে চাকরির পরীক্ষায় গণিতের চেয়ে নম্বর বেশি সাধারণ জ্ঞানে

ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটির সদস্যভুক্ত ১০টি ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ২০২১ সালভিত্তিক অফিসার (সাধারণ) পদে ২ হাজার ৭৭৫ জন নিয়োগের লক্ষ্যে অনুষ্ঠেয় প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষার সিলেবাস প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। লিখিত পরীক্ষার নতুন সিলেবাসে গণিতের চেয়ে সাধারণ জ্ঞানে বেশি নম্বর রাখা হয়েছে। এ নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন চাকরিপ্রার্থীরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়োগসংক্রান্ত ওয়েবসাইটে ১০টি ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লিখিত পরীক্ষার ২০০ নম্বরের সিলেবাস প্রকাশ করা হয়েছে। এর মধ্যে ইংরেজি ফোকাস রাইটিংয়ে ৩৫, বাংলা ফোকাস রাইটিংয়ে ৩০, সাধারণ জ্ঞানে ৩০, গণিতে (এসএসসি পর্যায়ের) ২৫, ইংরেজি কমপ্রিহেনশনে ২০, বাংলা থেকে ইংরেজি অনুবাদে ২০, ইংরেজি থেকে বাংলা অনুবাদে ২০ এবং ইংরেজি সারসংক্ষেপে ২০।

২০১৮ ও ২০১৯ সালভিত্তিক ১০টি ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে অফিসার (সাধারণ) পদের লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নে দেখা যায়, গণিতে ৩৫ নম্বর ছিল আর সাধারণ জ্ঞানে ছিল ৩০। গণিতে পাঁচটি প্রশ্ন ছিল, প্রতিটিতে ৭ নম্বর করে ছিল। আর সাধারণ জ্ঞানে ১০টি প্রশ্ন ছিল, প্রতিটিতে ৩ নম্বর করে বরাদ্দ ছিল।

পরের বছর গণিতে ৫ নম্বর কমিয়ে ৩০ করা হয়। তবে সাধারণ জ্ঞানে আগের নম্বরই ছিল। ২০২০ সালভিত্তিক ১০টি ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে অফিসার (সাধারণ) পদে গণিতে ৩০ নম্বরের ক্ষেত্রে ৫টি প্রশ্ন ছিল, একেকটিতে ৬ নম্বর করে বরাদ্দ ছিল। সাধারণ জ্ঞানে ৩০ নম্বরের ক্ষেত্রে ১৫টি প্রশ্ন ছিল। একেকটি সাধারণ জ্ঞানের বিপরীতে ২ নম্বর করে বরাদ্দ ছিল।

নতুন সিলেবাসে গণিতের ক্ষেত্রে আবার ৫ নম্বর কমিয়ে ৩০ থেকে ২৫ করা হয়েছে। তবে সাধারণ জ্ঞানে ৩০ নম্বরই রাখা হয়েছে। যেহেতু ব্যাংকে চাকরি করতে গণিতের জ্ঞান লাগে, তাই ব্যাংকের চাকরির পরীক্ষার প্রশ্নে সাধারণ জ্ঞানের চেয়ে গণিতে কম নম্বর কাম্য নয় বলে জানিয়েছেন চাকরিপ্রার্থীরা।

৪৪তম বিসিএসের ‘খাতা দিচ্ছি, দেব’ বলে দিচ্ছেন না পরীক্ষক

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক চাকরিপ্রার্থী প্রথম আলোকে বলেন, যেহেতু গণিতে এসএসসি পর্যায়ের প্রশ্ন থাকে, তাই সেসব গণিতের সমাধান মানবিক বিভাগ, ব্যবসায় শিক্ষা ও বিজ্ঞান বিভাগ—তিন বিভাগের প্রার্থীদেরই আয়ত্তে থাকে। গণিতের মাধ্যমে প্রকৃত মেধাবী যাচাই সম্ভব। কারণ, সাধারণ জ্ঞানের ক্ষেত্রে পরীক্ষার হলে দেখা যায় অনেক প্রার্থী অন্যের সাহায্য নিয়ে এক–দুটি শব্দে উত্তর করেই সাধারণ জ্ঞানে সব নম্বর পেয়ে যান। এ ক্ষেত্রে প্রকৃত মেধাবীরা পিছিয়ে যান। তাই গণিতের চেয়ে সাধারণ জ্ঞানে কম নম্বর রাখা উচিত। এ ছাড়া আগে ইংরেজিতে সারসংক্ষেপ ছিল, মাঝখানে আর্গুমেন্টের প্রশ্ন দিয়ে আবার সারসংক্ষেপ দেওয়া হচ্ছে। এভাবে বারবার সিলেবাস পরিবর্তনের কারণে প্রস্তুতি নিতেও সমস্যা হয়।

জোবায়ের আহমেদ নামের আরেক চাকরিপ্রার্থী প্রথম আলোকে বলেন, ব্যাংকে চাকরি করতে প্রয়োজন গণিত আর তথ্যপ্রযুক্তি জ্ঞানের। সাধারণ জ্ঞান জানাও জরুরি। তবে সাধারণ জ্ঞানে এত বেশি নম্বর রাখার কোনো যৌক্তিকতা নেই। কারণ, সাধারণ জ্ঞান মুখস্থের বিষয়, এখানে মেধা যাচাইয়ের কিছু নেই।

ব্যাংকে চাকরি করতে প্রয়োজন গণিত আর তথ্যপ্রযুক্তি জ্ঞানের। সাধারণ জ্ঞান জানাও জরুরি। তবে সাধারণ জ্ঞানে এত বেশি নম্বর রাখার কোনো যৌক্তিকতা নেই। কারণ, সাধারণ জ্ঞান মুখস্থের বিষয়, এখানে মেধা যাচাইয়ের কিছু নেই।

জোবায়ের আহমেদ, চাকরিপ্রার্থী

এ বিষয়ে ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটি সচিবালয়ের (বিএসসিএস) পরিচালক ও সদস্যসচিব মো. সাঈদুর রহমান খান প্রথম আলোকে, শুধু বিজ্ঞান বিভাগের প্রার্থীরা গণিতে ভালো করেন। মানবিক, ব্যবসায় শিক্ষাসহ সব বিভাগের প্রার্থীরা যেন ভালো করতে পারেন, এ জন্য গণিতে নম্বর কমানো হয়েছে।

ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটির সদস্যভুক্ত ১০টি ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ২০২১ সালভিত্তিক অফিসার (সাধারণ) পদে ২ হাজার ৭৭৫ জন নিয়োগের উদ্দেশ্যে অনুষ্ঠেয় প্রিলিমিনারি (এমসিকিউ) পরীক্ষার জন্যও সিলেবাস প্রকাশ করা হয়েছে। এতে ১০০ নম্বরের মধ্যে বাংলায় ২৫ নম্বর, ইংরেজিতে ২৫ নম্বর, গণিতে ২০ নম্বর, সাধারণ জ্ঞানে ২০ নম্বর এবং কম্পিউটারে ১০ নম্বর রাখা হয়েছে।

admin

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *